মাঠকর্মীর মৃত্যুতে প্রশ্নের মুখে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের কৌশল
পূর্ব বর্ধমান: আসন্ন নির্বাচনের পূর্বে চলমান ভোটার তালিকা বিশেষ সংক্ষিপ্ত সংশোধনের (SIR) কাজের ‘অসহনীয় চাপ’-এর শিকার হলেন এক বুথ লেভেল অফিসার (BLO)। পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি চক বলরামপুর এলাকা থেকে উঠে আসা এই মর্মান্তিক খবরে রাজ্য জুড়ে প্রশাসনিক কাজের চাপের কৌশল নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
মৃত বিএলও-র নাম নমিতা হাঁসদা। তিনি ২৭৮ নম্বর বুথের দায়িত্বে ছিলেন এবং পেশায় ছিলেন একজন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। পরিবারের অভিযোগ, ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম বিতরণ ও সংগ্রহের যে প্রবল টার্গেট তাঁকে দেওয়া হয়েছিল, তার চাপ সহ্য করতে না পেরেই তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে।
জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় তালিকা সংশোধনের গুরুদায়িত্ব পালনের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন নমিতা দেবী। তাঁকে দ্রুত কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকেরা তাঁর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান। নমিতা দেবীর স্বামী মাধব হাঁসদা স্পষ্টতই অভিযোগ করেছেন যে, ব্লক বা জেলা প্রশাসনের তরফে ফর্ম বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য লাগাতার চাপ দেওয়া হচ্ছিল।
পরিবারের অভিযোগ: নমিতা দেবীর স্বামী বলেন, “বারবার বিডিও অফিস থেকে কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছিল এবং দ্রুত টার্গেট পূরণের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। শারীরিক ও মানসিক ধকলের বিষয়টি কর্তৃপক্ষ বিন্দুমাত্র বিবেচনা করেনি।”
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যখন এই বিশেষ সংশোধনী প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে একাধিক কর্মচারী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ এবং চাপের অভিযোগ উঠছে, ঠিক তখনই একজন সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত BLO-র মৃত্যুর ঘটনা সেই উদ্বেগকেই আরও বাড়িয়ে দিল। একজন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর উপর অতিরিক্ত নির্বাচনী দায়িত্বের বোঝা এবং সেই কাজের জন্য বেঁধে দেওয়া কঠোর সময়সীমা (Deadlines) কেন একজন মানুষের জীবন কেড়ে নিল, সেই প্রশ্ন এখন প্রশাসনিক করিডোরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
জেলা প্রশাসন যদিও এই ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু এই অকালমৃত্যু প্রশাসনের উচ্চমহলে একটি বার্তা পৌঁছে দিল— গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনের সময় মাঠকর্মীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং কাজের ভার সুষমভাবে বন্টন করা অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার এই মানবিক দিকটি নিয়ে কমিশন ও প্রশাসনের অবিলম্বে ভাবনা-চিন্তা করা উচিত।





