Loading ...

বিহারে ‘সুনামি’ জয়! নারীশক্তির সমর্থনে মোদি-নীতিশ জুটির ব্লকবাস্টার প্রত্যাবর্তন: ভরাডুবি হলো মহাজোটের

বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এক ঐতিহাসিক ফলের সাক্ষী রইল দেশ। মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ (NDA) জোট ২৪৩টি আসনের মধ্যে প্রায় ২০৫টি আসন জিতে একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপন করেছে। এই বিশাল বিজয় শুধু বিহারের রাজনীতিকেই নয়, বরং ২০২৬ সালের আসন্ন রাজ্য নির্বাচনগুলির আগে জাতীয় রাজনৈতিক মানচিত্রকেও নতুন করে লিখলো।

দীর্ঘ ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও স্থিতাবস্থা-বিরোধী হাওয়াকে নস্যাৎ করে এনডিএ-র এই জয়কে বিশ্লেষকরা ‘উন্নয়ন ও আস্থার বিজয়’ হিসেবে দেখছেন।

এক নজরে নির্বাচনের মূল আকর্ষণ

  • এনডিএ-র আসন সংখ্যা: প্রায় ২০৫ (বিজেপি একক বৃহত্তম দল)
  • মহিলা ভোটারের সমর্থন: রেকর্ড সংখ্যক মহিলা ভোটারের ভোটদান এনডিএ-র পক্ষে নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়েছে।
  • মহাজোটের বিপর্যয়: আরজেডি (RJD) এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের আসন সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
  • জাতীয় বার্তা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই জয়কে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ‘পথ প্রশস্তকারী’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।1

বিজয় নিশ্চিত করলো যে ৩টি প্রধান ফ্যাক্টর

এনডিএ-র এই বিশাল সাফল্যের পেছনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট কৌশল এবং নীতিশ-মোদি জুটির প্রতি মানুষের অবিচল আস্থা।

১. ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’: নারীশক্তির নীরব সমর্থন

এনডিএ-র জয়ের সবচেয়ে বড় কারণ হলো রাজ্যের নারী ভোটারদের একতরফা সমর্থন। নির্বাচনের ঠিক আগে ১ কোটি ৩৭ লাখনারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেওয়ার প্রকল্পটি (মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা) ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। ফলস্বরূপ, ভোটদানের হার পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে ছিল চোখে পড়ার মতো বেশি।

২. স্থিতিশীলতা বনাম ‘জঙ্গলরাজ’ আখ্যান

প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘জঙ্গলরাজ’-এর সমালোচনামূলক বার্তা এবং নীতিশ কুমারের ‘সুশাসন বাবু’ ভাবমূর্তি বিহারের ভোটারদের স্থিতিশীলতার দিকে ঝুঁকতে উৎসাহিত করেছে। আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ভোটারদের কাছে স্পষ্ট বার্তা হিসেবে পৌঁছেছে।

৩. ‘মোদি ফ্যাক্টর’ ও বিশ্বাসযোগ্যতা

বিহারের মানুষ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘গ্যারান্টি’ এবং উন্নয়নমূলক কর্মসূচির প্রতি বিশ্বাস দেখিয়েছেন। যেখানে যেখানে এনডিএ দুর্বল ছিল, সেখানেই মোদির শেষ মুহূর্তের প্রচার এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধাগুলি বিজেপির পালে হাওয়া দিয়েছে।


মহাজোটের ভরাডুবির নেপথ্যে

অন্যদিকে, তেজস্বী যাদব এবং রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রত্যাশিত ফল লাভে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।2

  • বিফল হলো ‘ভোট চুরির’ অভিযোগ: মহাজোটের প্রধান প্রচারের বিষয় ছিল ‘ভোট চুরি’ বা নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া নিয়ে রাহুল গান্ধী যে অভিযোগ তুলেছিলেন, ভোটাররা তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।3
  • ব্যর্থ হলেন তিন ‘ব্যাটম্যান’: ভিডিও বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, তেজস্বী, রাহুল এবং অখিলেশ যাদবের সম্মিলিত প্রচার (তিন ‘ব্যাটম্যান’) কোনো কার্যকর নির্বাচনী কৌশল তৈরি করতে পারেনি।
  • কংগ্রেসের করুণ পরিণতি: রাহুল গান্ধীর বিদেশ ভ্রমণ এবং ছট পূজা নিয়ে করা বিতর্কিত মন্তব্য কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। RJD-র আসন সংখ্যা ৭৫ থেকে কমে ২৫-এর কাছাকাছি আসায় তেজস্বী যাদবের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।4

জাতীয় রাজনীতিতে এর প্রভাব: এবার কি বাংলা?

বিহারের এই জয় এখন এনডিএ-র পরবর্তী টার্গেট, ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন-এর জন্য এক নতুন শক্তি জুগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রকাশ্যেই বলেছেন, “বিহার হয়েই গঙ্গা যায় বাংলায়!”— যা স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিচ্ছে, এনডিএ এখন এই জয়ের টেমপ্লেট ব্যবহার করে বাংলা থেকে ‘জঙ্গলরাজ’ উপড়ে ফেলতে বদ্ধপরিকর।

এই ফলাফলের পর কেরালা, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতে আগামী নির্বাচনে এনডিএ-র রণকৌশল কী হতে চলেছে, তা দেখার জন্য মুখিয়ে আছে সারা দেশ।

Share it :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Get free tips and resources right in your inbox, along with 10,000+ others

Categories

Latest Post